খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  চাঁদপুরে জাহাজে ৭ জনকে হত্যা: আসামি ইরফান ৭ দিনের রিমান্ডে
বায়ু দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয়রা

সাতক্ষীরায় অবৈধভাবে চলছে ইটভাটা : পুড়ছে তুষকাঠ, কাঠ ও টায়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক,সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জেলার অধিকাংশ ইট ভাটায় কয়লার সাথে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানে কালি। ভাটায় কয়লার সাথে কাঠ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানে কালি ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর ফলে বায়ু দূষনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকির সম্মুখিন হচ্ছে স্থানীয়রা। এছাড়া অবাধে কাঠ পোড়ানোর কারণে একদিকে যেমন বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, তেমনি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়াপত্র ও সরকারি লাইসেন্স ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চলছে এসব ইটভাট।

দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সাতক্ষীরায় সে নির্দেশনা মানছে না কেউ। মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসকের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তর হতেগোনা দু-একটি ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিতে সাতক্ষীরাতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাতক্ষীরা জেলায় ১২৫টি ইটভাটার মধ্যে ৩০টি ভাটা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চালু ৯৫টি ভাটার মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৩০টি ভাটার। বাকি ৬৫টি ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। পরিবেশের ছাড়পত্র বিহীন এসব অবৈধ ইটভাটার কোন সরকারি লাইসেন্সও নেই। শুধুমাত্র উচ্চ আদালতে একটি রিটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ভাটা মালিকরা অবৈধভাবে চালাচ্ছে এসব ইটভাটা। উচ্চ আদালতে রীট করার কারণে পরিবশে অধিদপ্তর অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না।


এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি না থাকায় অবৈধ এসব ভাটায় ব্যহৃত হচ্ছে কাঠ ও তুষকাঠ এবং টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি। টায়ার পোড়ানো কালির ধোয়া ক্যান্সারের মত মরনঘাতি ব্যাধির সহায়ক। ফলে বায়ু দূষনের কবলে পড়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে অবৈধ এসব ইটভাটার আশে-পাশে বসবাসকারি জনসাধারণ।

সরেজমিনে সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অধিকাংশ ভাটাগুলোতে কয়লার সাথে তুষকাঠ মিশিয়ে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাথে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ ও টায়ার পোড়ানো কালি।

শহরের অদূরে বিনেরপোতা এলাকার একটি ইটভাটায় পোড়াইয়ের কাজে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, সংশ্লিষ্ট ভাটামালিকের নির্দেশে দিনে অল্প কয়লা ও সারারাত শুধু জ্বালানি কাঠ প্লাস্টিক, সোয়াবিনের গাঁথ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি ব্যবহার করে করে তারা ইট পোড়াচ্ছেন। ভাটায় কাঠ ব্যবহার করলে প্রতিটি ইটে খরচ কিছুটা কম হয়। এজন্য অধিক লাভের আশায় ভাটা মালিকরা কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করে।

ইটভাটায় জ্বালানির কাজে কয়লার বদলে কাঠের ব্যবহার প্রসঙ্গে একটি ভাটার ম্যানেজার জানান, প্রথমে ভাটায় নতুন আগুন জ্বালানোর সময় ভাটার ভিতরে অল্প কিছু কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় সাথে প্লাস্টিক, তুষকাঠ ও টায়ারের কালি ব্যবহার করা হয়।

নাগরিক নেতা আলিনুর খান বাবুল বলেন, উচ্চ আদালত এক আদেশে দেশের সকল অবৈধ ইটভাট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটা পুরোদমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এসব অবৈধ ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে কয়লার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও তুষকাঠ এবং টায়ার পোড়ানো কালি। টায়ার পোড়ানো কালির ধোয়া ক্যান্সারের মত মরনঘাতি ব্যাধির সহায়ক। ফলে বায়ু দূষনের কবলে পড়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকিতে রয়েছে অবৈধ এসব ইটভাটার আশেপাশে বসবাসকারি জনসাধারণ।

এ প্রসঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজের সহযোগি অধ্যাপক ক্যান্সার সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়, তাহলে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যায়। এতে বৃদ্ধ এবং শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। এছাড়া টায়ার পোড়ানো কালির ধোয়া খুবই বিষাক্ত। এই ধোয়া ক্যান্সারের সহায়ক। ফলে এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।

এবিষয় সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, জেলায় বর্তমানে ৯৫টি ভাটার মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৩০টি ভাটার। বাকি ৬৫টি ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এসব ভাটা মালিকরা এসব ভাটা মালিকরা উচ্চ আদালতে রিট করে তাদের ভাটা পরিচালনা করছেন। যে কারনে উচ্চ আদালতের রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, জেলার ব্রিক ফিল্ড গুলো কাঠ ও তুষকাঠ পোড়ানো শুরু করেছে জানতে পেরে আমরা অভিযান পরিচালনা করা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইট ভাটায় কাঠ ও তুষকাঠ পোড়ানো বন্ধে খুব শীঘ্রেই অভিযান শুরু করা হবে।

এবিষয়ে জানার জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ এর সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!